কিওক্রাডং ভ্রমনের অপূর্ব বৃত্তান্ত লিখতে বসলাম, পাহাড় দেখার অনাবিল
আনন্দ, সীমাহীন বিশালতা আমদের মনকে পরিপূর্ণ করে দিয়েছে । ডিসেম্বর এর পনের তারিখ
রাতে চিটাগংগামি বাস এ চেপে বসলাম আমরা বেশ কয়েকজন। ঢাকা চিটাগাং মহাসড়কে জ্যাম এর
কারণে পৌছতেই সকাল ১১ টা। চিটাগং থেকে যেতে হবে বদ্দারহাট। বন্ধুমহলে চিটাগংবাসী
লোকজন থাকায় কাজটা সহজ হয়ে গেল। বদ্দারহাট থেকে যেতে হবে বান্দরবান ,পুবালি বাস এ
করে রওনা করলাম। ভেবে রেখেছিলাম পাহাড়ি এলাকায় ঢুকেই পরেছি,কিন্তু বান্দরবান আসার
আগে পর্যন্ত তেমন কোন পাহাড় এর দেখা পাইনি।
তিন ঘন্টার জার্নি করে বান্দরবান এসে পৌছালাম। বান্দরবান পৌছতেই বেশ খানিকটা দেরি হয়ে গেল। সকালে দেরি হওয়ার প্রভাবটা ভাল
করেই পরল। কারন বান্দরবান থেকে রুমা যাওয়ার বাস দুপুর ৩ টার পর আর পাওয়া যায় না। বাধ্য
হয়ে বাস রিজার্ভ নিতে হল। শেষ বিকেলে ঢুলুঢুলু চোখে পাহাড় এর আবেশ অনুভব করতে
পারলাম।
রুমা বান্দরবান অবস্থিত একটা থানা
শহর। রাতে রুমাতেই অবস্থান করতে হল। গাইড এর কল্যাণে সব কিছু গুছানোই পেয়েছেলাম। থাকার
হোটেলটা ছিল বেশ সুন্দর, সাঙ্গু নদীর তিরে। থাকার হোটেল এর নিচ তলায় খাওয়ার বাবস্থা
ছিল। জম্পেশ খাওয়ার পর তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পরলাম।সকাল ৫ টা বাজতেই ঘুম ভাঙল, তারাহুরো
করে উঠে ৬ টার মধ্যে খাওয়া দাওয়া সেরে নিলাম। সকালে শান্ত স্নিগ্ধ পাহাড় দেখে মন
প্রশান্তিতে ভরে উঠল। গাইড এসে তাড়া দিলে সবাই চান্দের গাড়িতে করে কিওক্রাডং এর উদ্দেশ্যে রওনা হলাম।
পাহাড়ি রাস্তা অতিক্রম করে একেবেকে
চললাম কিওক্রাডং এর উদ্দেশ্যে । কিন্তু চান্দের গাড়িতে
করে আমরা বগালেক পর্যন্ত যেতে পারলাম।সুউচ্চ পাহাড় এর মাঝখানে লেক, স্বচ্ছ জল , লেকের
শাপলা ফুল সবকিছু ছবির মত লাগল। বগালেক আসার পর সবাইকে বলা হল শুধু প্রয়োজনীয়
জিনিস রেখে বাগের ভার কমিয়ে নিতে। কারন
এরপর শুরু হবে লম্বা পথ। বগালেক থেকে দীর্ঘ ১৪ কিমি রাস্তা পায়ে হেটে যেতে হবে।
সবায় প্রয়োজনীয় পানি ও খাবার নিয়ে নিলাম। এবার শুরু হল আসল আডভেন্ঞার। আর সবার
ধৈর্য নিয়ে এগিয়ে যাবার পালা। সকাল ১০ টা সময় আমরা বগালেক থেকে কিওক্রাডং এর উদ্দেশে রওনা দিলাম। দলবদ্ধ ভাবে আমরা হাতে বাশের লাঠি নিয়ে ধির পদক্ষেপে
এগতে লাগলাম। আস্তে আস্তে সূর্যের তাপ বাড়ছিল। আর ক্লান্তি অবসাদ ঘিরে ধরছিল । মাঝ রাস্তায় পাহাড়ি গাছের
ছায়ায় কিছুটা জিরিয়ে নেই আবার এগই। আবার বসে বিস্কুট পানি খেয়ে শক্তি সঞ্ছায় করে
নেই। তখন ভরদুপুর ,গনগনে সূর্য আমাদের মাথার উপরে , আমরা সন্ধান পেয়ে যায় ঝর্নার ।
ঝর্নার নাম চিংড়ি ঝর্না। ঝর্নার ঠান্ডা সবচ্ছ জল পেয়ে সবাই পরিতৃপ্তি হয়। কেউ হাত
পা ডুবিয়ে বসে থাকে।
এরপর শুরু হয় নতুন উদ্দমে কিওক্রাডং এর উদ্দেশে যাত্রা , পাহাড়ি
রাস্তার আশেপআশে গাছ ঘাস বৃক্ষরাজি দেখে মন ভরে যায়। এক পাহাড় থেকে দূরে আরেক পাহাড়
দেখে সৌন্দর্্যে মন ভরে গেছে, চোখ জুড়িয়ছে।
এরপর হাটতে লাগলাম, হাটতে হাটতে
তন্ময় হয়ে পাহাড় এর নিরবতা শুনেছি। কখন নিজেরাই কোলাহল করেছি ,সেলফি তুলেছি, পাহাড়কে
একান্ত আপন করে নিয়েছি খানিক সময়ের জন্য । পড়ন্ত বিকালে এসে পৌছলাম দারজিলিং পাড়া। এতখনে চোখে পরল লোকালয়। সবাই সস্তির নিঃশ্বাস ফেলল।খাবার এর দোকান পাওয়া
গেল। বিন্নি পিঠা পাওয়া গেল, সিদ্ধ চাল কলাপাতায় মুড়িয়ে তৈরি পিঠা। আনেকে নুডুলস খেল। ভরপুর খাবার পেয়ে দীর্ঘ ট্র্যাকিং এর ক্লান্তি ঘুচেছে ।দার্জিলিং পাড়া থেকেই দেখা যাচ্ছিল কিওক্রাডং এর চূড়া।
তারপর অল্পসময়ে আমরা পেয়ে গেলাম কিওক্রাডং এ পৌছাবার পরম আনন্দ।
আর্মি ক্যাম্প চোখে পরল ,বাশের তৈরি একটি গেট ছিল।
Comments
Post a Comment