চতুরঙ্গ উপন্যাসের মূল চরিত্র চারটি। চারটি বিশেষ কাহিনী একত্রিত করেই, একই সুতোর টানে আবর্তিত হয়েছে শ্রীবিলাসের জবানীতে। তারপরও শচীশ না শ্রীবিলাস কাকে প্রধান চরিত্র বলবো তা নিয়ে দ্বন্ধ থেকেই যায়।
জ্যাঠামশাই জগমোহন এর নাস্তিকতার আড়ালে নির্লোভ জন সেবা করা মানবধর্মের সুন্দর পরিচয় বহন করে। জগমোহন থেকে সে মহান গুন পরিচালিত হয়েছে শ্রীবিলাসের দিকে। তৎকালীন সমাজ ব্যাবস্থায় স্রোতের বিপরীতে চলা এরকম চরিত্র সৃষ্টি করা কখনোই সহজ কাজ ছিলো না।নারীজীবননের নানা দ্বন্দ্ব সংঘাত সুচারুরূপে উঠে এসেছে দামিনীর মধ্যে। দামিনীর ভালোবাসা শচীশ আর শ্রীবিলাসের জীবনে নিয়ে এসেছে শীতলতা।যদিও ভালোবাসার স্রোত সর্বদাই শচীশের দিকেই প্রবাহিত হয়েছে। এমনকি শ্রীবিলাসের সাথে বিবাহের পরও সে শচীশের প্রতি নিবেদিতপ্রান। শচীশের জীবিকার চিন্তাও সেই করেছে।কিন্তু মৃত্যুর পূর্ব মূহুর্তে শেষ আকুতিটুকু শ্রীবিলাসের প্রতিই ছিলো "সাধ মিটিল না, জন্মান্তরে আবার যেন তোমাকে পাই "। দামিনী শক্তভাবে অবহেলা করে গেছে লীলানন্দস্বামীর ধর্ম, কর্ম, প্রেম আর আধ্যাত্মিকতা।
চারটি চরিত্রকে আলাদাভাবে বর্ননা করেও, তাদের স্বকীয়তা ধরে রেখেছেন সমানভাবে। আর এখানেই রবীন্দ্র উপন্যাসের সার্থকতা। ইহজাগতিকতা -পারলৌকিকতা,নাস্তিকতা আর আস্তিকতা নিয়ে গভীর আলাপ না দিয়ে একদম ঠাস বুননেলেখা এই উপন্যাস পড়তে যেয়ে এতটুকুও বেগ পেতে হয় না!
Comments
Post a Comment